জাকাত কাদের উপর ফরজ? – বিস্তারিত ব্যাখ্যা
জাকাতের ফজিলত
জাকাত ইসলামের পাঁচটি মূল স্তম্ভের একটি এবং এটি নির্দিষ্ট শর্ত পূরণকারী মুসলমানদের জন্য ফরজ (অবশ্য পালনীয়)। কুরআন ও হাদিস অনুযায়ী, যাদের উপর জাকাত ফরজ হয়, তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা নিচে দেওয়া হলো।
---
✅ যাদের উপর জাকাত ফরজ হবে:
জাকাত ফরজ হওয়ার জন্য কয়েকটি শর্ত পূরণ করতে হবে।
১. মুসলিম হতে হবে
কেবল মুসলমানদের উপর জাকাত ফরজ।
অমুসলিমদের উপর জাকাত ফরজ নয়, তবে তারা স্বেচ্ছায় দান করতে পারে।
2. প্রাপ্তবয়স্ক হতে হবে
শিশুদের উপর জাকাত ফরজ নয়, তবে তাদের সম্পদ থাকলে অভিভাবক জাকাত আদায় করতে পারেন।
প্রাপ্তবয়স্ক (বালেগ) হলে এবং সম্পদ থাকলে জাকাত দিতে হবে।
3. সুস্থ মস্তিষ্কের অধিকারী হতে হবে
মানসিক ভারসাম্যহীন বা পাগল ব্যক্তির উপর জাকাত ফরজ নয়।
তবে তাদের সম্পদ থাকলে অভিভাবক তাদের পক্ষ থেকে জাকাত আদায় করবেন।
4. সম্পদের মালিক হতে হবে (নিসাব পরিমাণ সম্পদ)
যার ন্যূনতম নিসাব পরিমাণ সম্পদ রয়েছে, তার উপর জাকাত ফরজ।
নিসাব হলো নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ, যা এক বছর ধরে মালিকানায় থাকলে জাকাত দিতে হয়।
5. ঋণমুক্ত হতে হবে
যাদের অনেক ঋণ আছে এবং নিসাব পরিমাণ সম্পদ নেই, তাদের উপর জাকাত ফরজ নয়।
যদি সম্পদের পরিমাণ ঋণ পরিশোধের পরও নিসাব পরিমাণ থাকে, তবে জাকাত দিতে হবে।
6. প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ থাকতে হবে
মৌলিক চাহিদা (খাবার, বাসস্থান, জামাকাপড়, শিক্ষা, চিকিৎসা) পূরণের পর নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে জাকাত ফরজ হয়।
ব্যক্তির ব্যবহৃত ঘর, গাড়ি, আসবাবপত্রের উপর জাকাত ফরজ নয়।
7. এক বছর অতিবাহিত হতে হবে (হাওলানুল হাওল)
সম্পদ এক বছর মালিকানায় থাকলে জাকাত ফরজ হয়।
এক বছর না হলে, জাকাত দিতে হয় না (ব্যবসার মাল ও কৃষিজ সম্পদ ব্যতীত)।
---
✅ নিসাব পরিমাণ সম্পদের পরিমাণ:
নিসাব নির্ধারণ হয় সোনা ও রুপার মান অনুযায়ী।
সোনা: ৭.৫ ভরি (৮৭.৪৮ গ্রাম)
রূপা: ৫২.৫ ভরি (৬১২.৩৬ গ্রাম)
নগদ টাকা: সমপরিমাণ টাকা যদি সোনা বা রূপার মূল্যের সমান হয়
ব্যবসার মাল: নিসাব পরিমাণ মূল্যমান থাকলে জাকাত ফরজ
জমি বা সম্পত্তি: যা ব্যবসার উদ্দেশ্যে রাখা হয়েছে, তার উপর জাকাত ফরজ
🔹 জাকাতের হার: মোট সম্পদের ২.৫% (৪০ টাকার মধ্যে ১ টাকা)
---
✅ যাদের জাকাত দেওয়া যাবে:
কুরআনে (সূরা আত-তাওবা ৯:৬০) জাকাত দেওয়ার ৮ শ্রেণির মানুষের কথা বলা হয়েছে:
১. গরিব: যাদের ন্যূনতম প্রয়োজন পূরণের জন্য যথেষ্ট সম্পদ নেই।
2. মিসকিন: চরম দারিদ্র্যের মধ্যে আছে, যার কাছে কিছুই নেই।
3. জাকাত আদায়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি: যারা জাকাত সংগ্রহ ও বিতরণের দায়িত্ব পালন করেন।
4. মুক্তিপ্রাপ্ত দাস: দাস মুক্ত করার জন্য অর্থ প্রয়োজন হলে দেওয়া যাবে।
5. ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি: যারা বৈধ কারণে ঋণগ্রস্ত এবং তা পরিশোধ করতে পারছে না।
6. আল্লাহর পথে: ইসলাম প্রচার, মাদ্রাসা, মসজিদ ও ধর্মীয় কাজে ব্যয় করা যায়।
7. মুসাফির: যারা ভ্রমণে আর্থিক সংকটে পড়েছে, তাদের সহায়তা করা যায়।
8. নওমুসলিম: যারা ইসলাম গ্রহণ করেছে, কিন্তু আর্থিক কষ্টে আছে।
---
✅ যাদের জাকাত দেওয়া যাবে না:
ধনী ব্যক্তি (যার নিসাব পরিমাণ সম্পদ আছে)
নিজের মা-বাবা, দাদা-দাদি, নানি-নানি
নিজের সন্তান, নাতি-নাতনি
স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে জাকাত দিতে পারবে না
বংশগত নবী (সা.) এর বংশধরদের (সাইয়্যেদ পরিবার)
---
যদি কেউ মুসলিম, প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্কের অধিকারী এবং নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়, তাহলে তার জন্য জাকাত ফরজ। জাকাত ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান, যা গরিবদের সাহায্য করার পাশাপাশি সম্পদের বারাকাহ বৃদ্ধি করে এবং সমাজে ভারসাম্য বজায় রাখে।