ভালোবাসার কষ্টের গল্প
গল্পের নাম: “অপমানের আগুন”
চরিত্রঃ
তানভীর – এক সংগ্রামী, সাধারণ ঘরের ছেলে, কিন্তু মনের দিক থেকে বিশুদ্ধ।
সোহানা – এক চঞ্চল, স্বার্থপর, বিলাসী জীবনমুখী মেয়ে।
রিজভী – শহরের প্রভাবশালী পরিবারের ছেলে, অনেক টাকা, গাড়ি-বাড়ি, কিন্তু নারীর প্রতি সম্মানহীন।
---
তানভীর, গ্রামের এক মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। বাবার ভ্যান চালানোর রোজগারে সংসার চলে কোনোমতে। কিন্তু ছেলেটার স্বপ্ন বিশাল—বড় হবে, মায়ের মুখে হাসি ফোটাবে, এবং সত্যিকারের ভালোবাসা দিয়ে কাউকে জীবনসঙ্গী বানাবে।
কলেজে পড়তে এসে তার পরিচয় হয় সোহানার সাথে।
চোখে রঙ, ঠোঁটে হাসি, আর কথায় ছলনা।
তানভীর জানত না, শহরের মেয়েরা ভালোবাসাকে খেলার মতো দেখে।
সোহানা প্রথমেই কাছে টানল তানভীরকে। বলল,
— “তুমি একেবারে আলাদা, তোমার মতো ছেলে আমি পাইনি কখনো।”
তানভীর বিশ্বাস করল।
সে নিজের পুরনো মোবাইল বিক্রি করে সোহানার জন্মদিনে ঘড়ি কিনে দিল,
নিজে না খেয়ে ওর প্রিয় খাবার এনে দিত।
ঘুরে বেড়াত একসাথে—নিরিবিলি পার্ক, সস্তা চায়ের দোকান, কলেজের করিডোর।
একদিন হঠাৎ সোহানা বদলে গেল।
মুঠোফোনে আর আগের মতো কথা বলে না, বারবার ব্যস্ত থাকে।
তার চেহারায় একটা দূরত্ব, কথায় অহংকার।
পরে তানভীর জানতে পারল, সে এখন রিজভীর সাথে ঘোরে—বড়লোক ছেলে, দামি বাইক, অভিজাত হোটেল, পার্টি, শপিং।
তানভীর একদিন মুখোমুখি হলো সোহানার,
— “তুমি আমাকে ছেড়ে গেলে? আমি তো তোমায় ভালোবাসি!”
সোহানার ঠোঁটে ঠান্ডা হাসি,
— “ভালোবাসা দিয়ে পেট চলে না, তানভীর। তুমি গরিব, আমি তোমার মতো ছেলেকে চাই না। রিজভী জানে কিভাবে মেয়েদের ভালো রাখতে হয়!”
তানভীর বলল,
— “তুমি জানো না, কে তোমায় ভালোবাসতো আর কে তোমায় ব্যবহার করছে।”
কিন্তু কথার বদলে সে পেল অপমান।
রিজভী এসে ধাক্কা দিয়ে বলল,
— “দূর হ, কুত্তার মতো পড়ে আছিস এক মেয়ের পেছনে!”
আর সোহানা?
সে হেসে বলল,
— “আমার প্রেমিক তোর মতো গরিবকে সহ্য করে না। এবার বুঝবি, মেয়েরা কাকে পছন্দ করে।”
তানভীরের চোখে জল এসেছিল না, বরং বুকের ভেতর জ্বলে উঠেছিল অপমানের আগুন।
সে চুপচাপ ফিরে গেল।
নিজেকে নিয়ে প্রতিজ্ঞা করল—আজ অপমানিত হয়েছে, কাল জিতবে সম্মানে।
রাত জেগে পড়াশোনা করল, ঘরে খেয়ে না খেয়ে কষ্ট করল।
সবাই হাসত, বলত—"গরিবের স্বপ্ন বড় হলে ভাঙে বেশি।"
কিন্তু তানভীর থামেনি।
শেষমেশ, সরকারি বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলো।
ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট পদে যোগ দিল, শহরের আলো ঝলমলে অফিসে।
একদিন সে গাড়ি করে অফিসে ঢুকছিল, তখন এক ভাঙা মুখ দেখা গেল গেটের পাশে—
সোহানা।
চেহারায় ক্লান্তি, চোখে অপমান, ঠোঁটে করুণা।
সোহানা বলল,
— “তানভীর, আমি ভুল করেছি। তুমি-ই ছিলে আমার সব। রিজভী আমাকে ব্যবহার করে ফেলে দিয়েছে। আমি আর পারছি না, ফিরতে চাই তোমার কাছে।”
তানভীর চোখে চোখ রেখে বলল,
— “তুমি ফিরে আসছো, কারণ এখন আমি বড় অফিসার। যদি আমি সেই আগের তানভীরই থাকতাম, তুমি কি ফিরে আসতে?”
সোহানা চুপ।
— “তুমি ভালোবাসা না, স্বার্থ খুঁজেছিলে। আমি সত্যিকারের ভালোবাসা দিয়ে তোমাকে আগলে রাখতে চেয়েছিলাম, তুমি সেটাকে পদদলিত করেছো।”
সোহানা কেঁদে ফেলল।
— “আমার ভুল হয়েছে, প্লিজ, আরেকবার সুযোগ দাও...”
তানভীর কঠিন গলায় বলল,
— “তুমি একটা নষ্ট মেয়ে। তোমার চোখে ভালোবাসা ছিল না, ছিল গায়ে-গায়ে সুবিধা নেয়ার খেলা।
তোমার মতো মানুষ ভালোবাসার যোগ্য না। আজ আমি তোমাকে গ্রহণ করবো না।
তুমি প্রতিদিন আসলেও আমি ঘৃণার চোখে তাকাবো, কারণ তোমার সেই অপমানের স্মৃতি এখনো আমার হৃদয়ে দগদগে।”
— “তুমি সুখী হবে না, কারণ তুমি যাকে ফেলে দিয়েছো, সে এখন সম্মান নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
আর তুমি?
তুমি ভিখারির মতো ভালোবাসা চাইছো, কিন্তু এখন সেটা আর তোমার কপালে নেই।”
তানভীর ফিরে গেল, চোখে আত্মবিশ্বাস, মনের গভীরে একটা শান্তি—
সে হেরে যায়নি।
সে জিতেছে—স্বপ্নে, জিদে, অপমানে, আর সম্মানে।
---
গল্পের উদ্দেশ্যে
ভালোবাসা যদি টাকা দিয়ে মাপা হয়, সেটা কখনো টেকে না।
যারা হৃদয়কে পদদলিত করে স্বার্থ খোঁজে, তারা শেষমেশ একাকীত্বেই ডুবে যায়।
আর যারা অপমানকে শক্তিতে রূপ দেয়, তারা একদিন সম্মানের সিংহাসনে বসে।